December 22, 2024, 3:02 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)/ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় কুমার নদের তীরে অবস্থিত শৈলকুপা শাহী মসজিদ দক্ষিণবঙ্গে সুলতানি আমলের স্থাপত্যকীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এ মসজিদ সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ’র শাসনামলে নির্মিত। মসজিদের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র যোগ্য উত্তরাধিকারী। ১৫১৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। ১৫৩২ সাল পর্যন্ত রাজকর্মে রাজধানী গৌড় থেকে ঢাকা যাবার পথে বেশ কয়েকদিন শৈলকুপায় অবস্থান করেন। এখানে সুলতানের সঙ্গে তার ধর্মপরায়ণ দরবেশ আরব শাহও ছিলেন।
শৈলকুপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আরব শাহ এখানে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। হাকিম খান ও সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদী নামে আরব শাহ’র দুই শিষ্যসহ তিনজন শৈলকুপা শহরে থাকার পক্ষে মত দেন। পরে সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ মসজিদ সংস্কার, সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য কয়েকশ বিঘা জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন। এর আগে, এলাকাটি ছিল অনেকটা জঙ্গলের মতো।
কথিত আছে, মসজিদটি এক রাতের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদের নানা অংশে রয়েছে সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলির নিদর্শন।
শৈলকুপা শাহী মসজিদের বর্তমান খতিব ও ইমাম হাফেজ মো. আনোয়ার হোসাইন জানান, এ মসজিদ দুটি পাথরের বিমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। পাশাপাশি এর উপরে রয়েছে ছয়টি সুবিশাল গম্বুজ। বাইরের চারপাশে রয়েছে চারটি পিলার। প্রতিটি দেয়ালের প্রস্থ ৬৫ ইঞ্চি। মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। পাশের দুটি থেকে কেন্দ্রীয় মেহরাবের আকার একটু বড়, ভেতরে ৫ ফুট উঁচু। চার কোণায় রয়েছে আরও চারটি মিনার। এগুলো গোলাকার ও বলয়রেখা দ্বারা অলঙ্কৃত।এদিকে, মসজিদটির বাইরে পূর্বদিকে একটি মাজার রয়েছে। যেখানে দুটি কবরের মধ্যে বড়টি শাহ সৈয়দ আরেফ-এ-রব্বানী ওরফে আরব শাহ-এর এবং ছোটটি সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদীর।
প্রাচীন এই স্থাপত্য নিদর্শন দেখতে আজও এখানে ছুটে আসেন অনেকেই। হাজার বছরের পুরোনো এই মসজিদে স্থানীয়রা শুধু নামাজই আদায় করেন না, আশপাশের এলাকা ও দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মনোবাসনা নিয়েও ছুটে আসেন অনেকে।
Leave a Reply